মুটিয়ে যাওয়ার কারণ যখন অপুষ্টি

স্থূলতা (obesity) বর্তমানে একটি বৈশ্বিক মারাত্মক রোগ। প্রকৃতপক্ষে এটি অনেক গুরুতর রোগের প্রধান কারণগুলোর অন্যতম। বিশ্বব্যাপী স্থূলতার গুরুতর অসুবিধা সম্পর্কে তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া এবং সব বয়সের মানুষকে এটি প্রতিরোধে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রতি বছর ৪ মার্চ বিশ্ব স্থূলতা দিবস পালিত হয়।

বিশ্বে প্রতি আটজনে একজন স্থূলতায় আক্রান্ত। শিশুদের মধ্যেও এই সমস্যাটি দেখা যায়। শিশুদের স্থূলতা থেকে সুরক্ষায় ৫টি সহজ টিপস নিচে দেওয়া হলো।

কিছু না খেলেও ওজন বেড়ে যাচ্ছে? ডায়েটে সংযম, জিম করেও ওজন নিয়ন্ত্রণে আসছে না? বর্তমানে শিশু থেকে টিনেজ, প্রাপ্তবয়স্ক—অধিকাংশেরই মূল সমস্যা হলো মুটিয়ে যাওয়া।

সম্প্রতি দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রত্যেক আটজনের একজনই মুটিয়ে যাওয়ায় আক্রান্ত। কেবল ভারতেই এই সমস্যায় আক্রান্ত আট কোটি মানুষ, যার মধ্যে এক কোটিই তরুণ। পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ গোটা বিশ্বে স্থূলতায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গবেষকরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মুটিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হল অপুষ্টি। এ ছাড়া অতিরিক্ত প্যাকেজড ফুড, ফাস্টফুড খাওয়া এবং বেশি হাঁটা-চলা না করার কারণেও মানুষ মুটিয়ে যায়।

অস্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি অতিরিক্ত চিনি ও অতিরিক্ত নুন খাওয়ার ফলেও এ স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয় বলে জানাচ্ছেন ল্যানসেটে সমীক্ষার সহ-গবেষক তথা ইম্পিরিয়াল লন্ডনের জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক মাজিদ ইজ্জাতি।

তিনি জানান, নিম্ন থেকে মাঝারি আয়ের দেশগুলোতেই স্থূলতায় আক্রান্তের হার বেশি। মিশর, ইরাক, লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, চিলি ও সিরিয়ায় শিশু থেকে মধ্যবয়সীদের মধ্যে মুটিয়ে যাওয়ার হার দ্রুত গতিতে বাড়ছে। তুরস্ক এবং সিরিয়াও এই তালিকা থেকে বেশি দূরে নেই।

স্থূলতা কি?

স্থূলতা হলো শরীরের এক বিশেষ অবস্থা। এই অবস্থায় শরীরে অতিরিক্ত স্নেহ বা চর্বি জাতীয় পদার্থ জমা হয় এবং স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। ফলে আয়ু কমে যেতে পারে এবং একইসঙ্গে শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) হলো শরীরের উচ্চতা ও ওজনের আনুপাতিক হার, যা দিয়ে বোঝা যায় কোনো ব্যক্তি মাত্রাতিরিক্ত ওজনবিশিষ্ট (pre-obese) কিনা। যদি কারো বিএমআই ২৫ kg/m2 থেকে ৩০ kg/m2মধ্যে থাকে, তখন তাকে স্থূলকায় বা মোটা বলা যেতে পারে, আর যখন বডি মাস ইনডেক্স (BMI) ৩০ kg/m2 বেশি থাকে তখন তাকে অতি স্থূলকায় বা অতিরিক্ত মোটা বলা হয়।

স্থূলতা বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা দেখা দেয়, বিশেষত হৃদরোগ, দ্বিতীয় পর্যায়ের ডায়াবেটিস, শুয়ে থাকার সময় শ্বাসকষ্ট, কয়েক ধরনের ক্যান্সার এবং অস্টিওআর্থারাইটিস। অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাদ্যগ্রহণ, কায়িক শ্রমের অভাব, বংশ পরম্পরায় জিনগত বৈশিষ্ট্য এবং কিছু ক্ষেত্রে জিনের চরিত্রের পরিবর্তন, হরমোন গ্রন্থির গণ্ডগোল, ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, মানসিক অসুস্থতা ইত্যাদিকেই মুটিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ধরা হয়।

কখনো দেখা যায়, অনেকে খুব কম খাচ্ছেন অথচ ক্রমশ ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে তার, এর জন্য ধীর বিপাক ক্রিয়া বা ধীরে হজম হওয়াকেই দায়ী করা যেতে পারে। শীর্ণ বা রোগা ব্যক্তিদের তুলনায় স্থূলকায় ব্যক্তিদের শরীরে বেশি শক্তি সঞ্চিত থাকায় তারা গড়ে বেশি পরিমাণে কর্মশক্তি ব্যয় করতে পারেন।

স্থূলতার প্রকারভেদ

শিশুর বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী স্বাস্থ্যবান শিশুর ওজনের তারতম্য ঘটে।

বিএমআই শ্রেণীবিভাগ

<১৮.৫          কম ওজন
১৮.৫—২৪.৯     স্বাভাবিক ওজন
২৫.০—২৯.৯    অতিরিক্ত ওজন বা ওভারওয়েট
৩০.০—৩৪.৯    মোটা হওয়ার প্রথম স্তর
৩৫.০—৩৯.৯    মোটা হওয়ার দ্বিতীয় স্তর
≥৪০.০          মোটা হওয়ার তৃতীয় স্তর

স্থূলতা প্রতিকার

স্থূলতার চিকিৎসায় সাধারণত খাদ্যতালিকা পরিবর্তন, শারীরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি, জীবনাচরণ পরিবর্তন এবং কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে।

নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, কম ক্যালোরিসহ একটি স্বাস্থ্যকর খাবার পরিকল্পনা অনুসরণ অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণের প্রথম চিকিৎসা। এটি নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপের সাথে যুক্ত হওয়া উচিত। কারণ এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

খাওয়া-দাওয়া, শারীরিক কার্যকলাপের অভ্যাস এবং জীবনধারা পরিবর্তন করা কঠিন, কিন্তু একটি পরিকল্পনা, প্রচেষ্টা, ধৈর্যের মাধ্যমে আপনি এগুলোতে ইতিবাচক পরিবর্তন এনে ওজন নিয়ন্ত্রণে সফল হতে পারেন।

এক্ষেত্রে নিচের টিপসগুলো আপনাকে সাহায্য করবে—

নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপে নিযুক্ত হওয়া, এটা দীর্ঘমেয়াদে আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে।

ওষুধ সেবন, তবে ওজন কমাতে কখন ওষুধ ব্যবহার করা হবে, তা একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ঠিক করবেন।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক কার্যকলাপ যথেষ্ট না হলে চিকিৎসকরা অতিরিক্ত ওজনের চিকিৎসায় ওষুধ লিখতে পারেন।

মো. ইরফানুর রহমান
শেষ বর্ষ, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ, উত্তরা

Leave a Comment